মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার খাসিয়াপুঞ্জিগুলোতে এ পর্যন্ত কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই সম্প্রদায়ের মানুষের সচেতনতা কৌশল ও ব্যবস্থাপনা অনুকরণীয় হতে পারে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্য মতে, মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৬৫টি পুঞ্জি (খাসি গ্রাম) রয়েছে। পুঞ্জিগুলোতে সব মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
করোনা সংক্রমণ শুরু হলে খাসিপুঞ্জির নেতারা নিজেদের করোনামুক্ত রাখতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালান। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তারা কিছু কৌশলও প্রণয়ন করেন। পুঞ্জি থেকে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে যেতে নিষেধ করেন এবং বাইরের মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে দেন। পুঞ্জিতে উৎপাদিত পান বিক্রির জন্য পুঞ্জির বাইরে স্থান নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়া বাজার করার জন্য নির্দিষ্ট লোককে আলাদাভাবে দায়িত্বও দেন।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির হাট-বাজারের দায়িত্বে থাকা সাকিল পামথেট বলেন, আমাকে পুঞ্জির সবার বাজার করার দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে এক দিন আমি বাজারে যাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে পুঞ্জির বাইরে নির্ধারিত স্থানে রাখি। সেখান থেকে যার যার জিনিস নিয়ে যান। বাজার থেকে ফিরে গোসল করে আলাদা ঘরে অবস্থান করি। যাতে আমার সংস্পর্শে অন্যরা না আসতে পারে। লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা মিলা তাংসং বলেন, পান বিক্রির সময় তারা পাইকারদের সঙ্গে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখেন এবং মাস্ক পরেন। ফেরিওয়ালাদের জন্যও পুঞ্জির বাইরে আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য কেনাবেচা করা হয়।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৬৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১৯ জন। কিন্তু এর মধ্যে খাসিপল্লীর কোনো সদস্য নেই। বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান এবং কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) জিডিশন প্রধান সুচিয়াং বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লকডাউনে থেকেছেন বলেই খাসিপুঞ্জিগুলোতে কোনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত কারও মধ্যে কোনো উপসর্গও দেখা যায়নি।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সদস্য সচিব ও লাউয়াছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী ফিলা পতমী বলেন, পুঞ্জিগুলোতে আমরা কঠোর লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলেছি। পুঞ্জিতে প্রবেশে ও বাইরের বেরোনোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ির ফল আমরা পাচ্ছি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, খাসিয়া সম্প্রদায়ের এই কৌশল ও ব্যবস্থাপনা সবার জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। সব পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা যদি এভাবে সচেতন ও আন্তরিক হন তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। সবাই সুরক্ষিত থাকবে এবং অন্যকে নিরাপদ রাখতে পারবে।